মানসিক থেরাপি আপনার জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন ধরনের লক্ষণ থাকলে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হবেন।
* আপনি চরম বিষণ্নতা বা রাগ অনুভব করেন : নিজের আবেগ অনুভূতির ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা ভালো কোনো লক্ষণ নয়। এ সমস্যা থেকে উত্তোরণে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন। সাইকোলজি টুডেতে প্রকাশিত এক লেখায় মনোবিজ্ঞানী ডেভিড স্যাক বলেন, ‘আপনার খাওয়া, ঘুম এবং নিত্যদিনের কাজকর্ম যদি স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে চলে যায়, কিংবা পরিবার-পরিজন ও বন্ধুদের সাহচর্য থেকে নিজেকে বিরত রাখতেই পছন্দ করেন তাহলে এর থেকে বেশি কোনো প্রভাব বিস্তার করার আগেই দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন।’ তিনি আরো বলেন, ‘যদি এই মানসিক পরিস্থিতি থেকে আপনি বেঁচে থেকে কি হবে কিংবা সুইসাইড করার মতো কথা চিন্তা করতে শুরু করেন তাহলে এই মুহূর্তেই আপনার একজন বিশেষজ্ঞের সাহায্যের প্রয়োজন।’
* আপনি যা পছন্দ করেন তাতে আর আগ্রহ বোধ করেন না : নিউ ইয়র্ক সিটির একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মারিশা আল্টার বলেন, ‘যখন আপনি অনুভব করেন যে আপনার পছন্দের কাজগুলো এখন আর আগ্রহের সৃষ্টি করছে না, তখন এর কারণ বের করতে আপনার উচিত একজন থেরাপিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা’। পছন্দের কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ইচ্ছা হারানো- গভীর হতাশা কিংবা কোনো সীমাবদ্ধতার জালে আটকে থাকার লক্ষণ হতে পারে। একজন থেরাপিস্ট আপনার সমস্যার প্রেক্ষিতে আপনাকে থেরাপি দেবেন, আপনার সমস্যার মূল্যায়ন করবেন। সেই সঙ্গে কি কারণে আপনি আবদ্ধ হয়ে রয়েছেন, সেই কারণ নির্ধারণের সঙ্গে সমস্যা সমাধানের উপায়ও নির্ধারণ করে দিবেন।
* আপনি সামাজিক অনুষ্ঠান উপেক্ষা করেন : আপনি কি আশেপাশের মানুষের মধ্যে থাকাকালীন সময়ে নার্ভাস অনুভব করেন? তাহলে আপনার ব্যক্তিত্বের উন্নয়নের জন্য থেরাপি জরুরি। ডা. আল্টারের মতে, ‘যদি আপনি নিজেকে পার্টি অনুষ্ঠান থেকে বাঁচিয়ে চলেন, জাঁকজমক কিংবা উৎসব অপছন্দ করেন, এমনকি নিজের পরিবার-পরিজন ও বন্ধুদের সংস্পর্শে আসতেও দ্বিধাবোধ করেন তাহলে হয় আপনি নিজের উপস্থিতি নিয়ে ভীত কিংবা অযোগ্যতার অনুভূতিতে ভুগছেন’। যখন উদ্বিগ্নতা আপনার প্রাত্যহিক কাজকর্ম ও মেলামেশায় বাঁধার সৃষ্টি করে তখন প্রথম কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে থেরাপি নেওয়া ভালো।
* আপনি মন্দ আচরণ করেন : মাঝে মাঝে স্বাভাবিক জীবনের বাইরে যেয়ে নিজেকে উপভোগ করা খারাপ কিছু না। তবে এই উপভোগ করতে যেয়ে নিজের সামগ্রিক সত্ত্বাকে বিলিয়ে দেওয়াটাও ভালো কাজ না। ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রায়ান হোয়েস বলেন, ‘যখন আপনি সীমার বাইরে যেয়ে অ্যালকোহল ও ড্রাগস সেবনের দিকে মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকে যাবেন ও খরচ করবেন, ঘন ঘন পাগলামি সম্পর্কে জড়াবেন, কিংবা অন্য মানুষের সঙ্গে উগ্র বা বাজে আচরণ করবেন তখন সেটা গভীর কোনো সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।’ কঠিন পরিস্থিতি বা আবেগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে কিংবা সেটিকে এড়িয়ে চলার কারণ হিসেবেই আপনি এই আচরণ করেন। একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত ও অন্তর্নিহিত বিষয়গুলো বুঝতে পারবেন।
* সম্পর্ক ধরে রাখা আপনার জন্য কঠিন : বন্ধু ধরে রাখা যদি আপনার জন্য কঠিন হয় কিংবা অন্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া যদি আপনার অভ্যাসের অন্তর্গত হয়ে থাকে তাহলে থেরাপিস্টের সাহায্য নিন। এছাড়া ভালোবাসার সম্পর্ককেও যদি কঠিন মনে হয় কিংবা সম্পর্ক ধরে রাখতে ইচ্ছে হয় না, সেক্ষেত্রেও বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। ডা. আল্টার বলেন, ‘জীবনের প্রথম দিকেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়’। তিনি আরো বলেন, ‘আপনি যদি থেরাপিস্টের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেন তাহলে সেটা বর্তমান পরিস্থিতি সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে’। ডা. হোয়েসের মতে, ‘থেরাপি হিসেবে- অন্যদের সঙ্গে কথা বলার কৌশল আপনি শিখতে পারেন অথবা আপনার স্ত্রী, বন্ধু, বস কিংবা ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে কথা বলার অনুশীলন থেরাপিস্টের সঙ্গে করতে পারেন।’
* আপনি মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত : ডা. আল্টার বলেন, ‘কিছু মানসিক আঘাতের কারণে দুঃখ-দুর্দশা কাটিয়ে উঠার জন্য মানুষ থেরাপি গ্রহণ করে থাকে। যেমন- ভালোবাসার মানুষের বা পরিবারের কোনো সদস্যের আকস্মিক মৃত্যু, সম্পর্কে দুর্দশা, গর্ভপাত বা সন্তান হারানো, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার ইত্যাদি। এমনকি শৈশবে যৌন হয়রানির মতো দুষ্কর্মের শিকার হয়ে সেই স্মৃতি ভুলার জন্যও অনেকে জীবনের কোনো এক মুহূর্তে এসেও থেরাপির আশ্রয় নেন।’ যদি কোনো ঘটনা আপনার স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে, ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে, পরিবার-পরিজন ও সম্পর্কে দূরত্বের সৃষ্টি করে তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
* আপনি নিজেকে আরো বেশি অনুধাবন করতে চান : ডা. হোয়েসের মতে, ‘কোনো কোনো ব্যক্তির কাছে থেরাপি হল নিজের সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার উপায়।’ কেন আপনি বর্তমানে ক্যারিয়ারে যুক্ত হলেন? কেন আপনি অপরিচিত লোকজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াচ্ছেন? কেন আপনি কোনো বিষয়ে গড়িমসি করছেন বা পাত্তা দিচ্ছেন না? যারা বেশি জোরে কথা বলে তাদেরকে আপনার বিরক্ত লাগার কারণ কী?
ডা. হোয়েস বলেন, ‘আমরা কীভাবে কথা বলি বা চিন্তা করি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এ ব্যাপারগুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পারাটা খুবই শক্তিশালী প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।’
* আপনি আরো বেশি সাপোর্ট চান : স্বাভাবিক দৃষ্টিতে সমস্যায় পড়ার পরেই সমস্যা সমাধানে সাহায্য নিতে হয়। কিন্তু কিছু কিছু সময়ে মানুষ কোনো কারণ ছাড়াই থেরাপি নিতে চায়। কোনো অসুস্থতা চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও সে সেটা অনুভব করে। মূলত তারা চায় যে তাদের পরিচিত সার্কেলের বাইরের কেউ তাদের কথাগুলো শুনুক।
ডা. হোয়েস বলেন, ‘যখন আপনি বিবাহ বিচ্ছেদ, সম্পর্কে ভাঙ্গন, চাকরি হারানো, প্রিয় কারো মৃত্যুতে শোকে মলিন তখন থেরাপির থেকে উত্তম আর কিছু হয় না। কারণ এখানে কেউ আপনার চাহিদা বা সমস্যা নিয়ে আপনাকে জ্ঞান দিবে না বা কথা শুনাবে না। কিংবা আপনার অসুবিধাকে কেউ তাদের স্বার্থের কাজে ব্যবহার করবে না।
* আপনি চেষ্টার পরও ব্যর্থ হচ্ছেন : মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অনলাইন প্লাটফর্ম ‘সাইক সেন্ট্রাল’ এর প্রতিষ্ঠাতা জন এম গ্রোহল বলেন, ‘কখনো কখনো পরিস্থিতি সামলাতে আমরা যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি সেটা ব্যর্থ হয়। যদি এমন হয়ে থাকে যে আপনি নিজের কোনো একটি বিষয়ে অনেক পড়াশোনা করেছেন, আপনার বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করেছেন, আত্ম-সহযোগিতার বিভিন্ন ধাপ ও চেষ্টা করেছেন কিন্তু কোনো সন্তোষজনক ফলাফল পাননি, তখন আপনাকে একজন থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে।